কুড়িগ্রামের ব্রিজের অভাবে ১৫ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ!!
ব্রিজের অভাবে ১৫ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ!!
নতুন ব্রিজ নির্মাণে মাথা ব্যথা নেই কর্তৃপক্ষের
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বন্যায় ব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন করে নির্মাণ হয়নি বাহেজের ব্রিজ। ফলে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে ১৫ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের।
স্থানীয়রা জানায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তী সময়ে উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়নের বেরুবাড়ীর ডাড়ার উপর নির্মিত হয় প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই বাহেজর ব্রিজ। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় ব্রিজটির ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও আজও নতুন করে নির্মিত হয়নি। শেষমেষ স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাঁশ ও কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচলের উপযোগী করলেও সেটিও এখন প্রায় অকেজো। গাছ ও বাঁশ দিয়ে দেয়া খুঁটিগুলোর অধিকাংশ পঁচে গেছে।
এছাড়াও গত তিন বছরের পানির স্রোতে নড়বড়ে হয়েছে সেসব খুঁটি। দুই পাশের দেয়া কাঠের রেলিং ভেঙ্গে গেছে। এমনকী ব্রিজের বাকী অংশও ভেঙ্গে খানা খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে দুদিকের রেলিংও। ফলে চলাচলের ব্যাপক অসুবিধের সৃষ্টি হয়েছে।
চলাচলের অনুপোযোগী ব্রিজের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় নানা ধরণের দুর্ঘটনা। এমনকী যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে প্রাণহানীর ঘটনাও। বিষয়টি বহুবার স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও এ ব্যাপারে কারো মাথাব্যথা নেই বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা আরও জানান, ব্রিজের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ বেরুবাড়ী বাজার ও উপজেলা সদরে চলাচল করেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার সব বয়সী মানুষ। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের স্কুলে পাঠিয়ে দুর্ঘটনার আসঙ্কায় আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা।
যোগাযোগের এমন করুন অবস্থা হওয়ায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও কৃষিক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে অপর প্রান্তের হাজীপাড়া, মন্ডলপাড়া, সরকারপাড়া, মধ্যপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, আনন্দপাড়া, আবাসন, চর রহমানের কুটি, কপিলেরচর, পশ্চিমের মিয়ারভিটা, মোবাল্লেগপাড়া, বেরুবাড়ী বাজার, ফরাসকুড়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রাম। কোনো মূমুর্ষ রোগী বা প্রসুতিকে নিয়ে যেতে ভয় হয় তাদের। রাতের বেলা কোনো রোগী আসঙ্কাজনক হলে কোনো যানবাহন ওই রোগীকে নিয়ে যেতে ভয় পায়। রাতের আঁধারে নড়বড়ে এই ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার আতঙ্ক তাড়া করে পথচারীদের মনে।
ব্রিজের পূর্বপাড় থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী যায় বেরুবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাফিজিয়া মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান, ইয়াছিন আলী, রতন মিয়া, শাহিন আলম জানায়, ব্রিজের উপর দিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা সময় কাঠের ব্রিজ ঝকঝক করে নড়াচরা করে। মনে হয় কখন যেনো পড়ে যাই। এর আগে অনেকে পড়েও গেছে। বই খাতা ভিজে গেছে। আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। এমনকী কয়েকবার এখানে দুর্ঘটনার শিকারও হয়েছেন অনেকে।
স্থানীয় মোকছেদ আলী, হোসেন আলী, নজরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা যে কী সমস্যায় আছি বোঝাতে পারব না। ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে সবদিক থেকে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। ভৌগলিক বৈষম্যের শিকার হয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়ে পড়েছি। বিভিন্ন কাজে সমস্যা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মোতালেব বলেন, আমি যোগাযোগ করছি যাতে ব্রিজটি বাকী অংশ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। আশা করছি অতি শীঘ্রই ব্রিজটি নির্মান কাজ শুরু হবে।
উপজেলা প্রকৌশলি বাদশা আলমগীর বলেন, ব্রিজটির নির্মাণের জন্য তালিকা করে সুপারিশ পাঠানো হয়েছ। যাতে খুব তাড়াতাড়ি ব্রিজটি নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয় সে চেষ্টা আমাদের আছে।
No comments